আলুর চপ  আর মোচার চপের (মোচা ছাড়া ) একটা সূক্ষ্ণ পার্থক্য

সন্ধ্যেবেলা একবার বাজারের দিকে যেতে হযেছিল মুগের ডাল আনার জন্য ,তা এই  সময়(মানে রবিবার রাতে ) মনিহারী দোকানে লোকের ভিড় একবারে জমজমাট। দোকানি তখন রাজা,যে কিনা অন্যসময় -'দাদা,চালটা এবার ফাইন কোয়ালিটির,৫ কিলো দিয়ে দি ' বা 'ঘি টা একবার নিয়ে গিয়েই দেখুন না '  সাধাসাধি করে,সেই দোকানদার রবিবার রাতে 'ভাই,১০ কিলো চাল দাও' বললেও কানে  তোলে না। তা সেই অঙ্ক অনুযায়ী মন কে তৈরী করে বের হলাম। 

পৌছে  দেখি যা ভেবেছি তাই ,মুদিখানার সামনে ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল দেখার মতো ভিড় জমেছে। একেকজন বোধহয় সপ্তাহের ,না না  মাসেরই বাজার করে নিচ্ছে।আমি নেব ২৫০ মুগের ডাল,ফলে দোকানদারের কৃপাদৃষ্টির রেঞ্জে আসার জন্য আমি দু-চারটে ফাউল করে,একটা ফাঁকে মুন্ডু গলাতে সমর্থ হলাম। কিন্তু দেখা গেল,এই সসাগরা পৃথিবীতে সূর্য -চন্দ্র -গ্রহ -নক্ষত্রের যোগ সুলভ হলেও রবিবারে ব্যস্ত দোকানির দৃষ্টি ও ভিড়ের মাঝে একটি  চাহিদাপূর্ণ মুখের যোগ বড়ই দুর্লভ। ২০ মিনিটের প্রানান্ত চেষ্টায় একটি ঠোঙ্গাপূর্ণ মুগডাল হস্তগত হলো। 

আমার আবার একটু খাটনিতেই পাকস্থলী কেমন খাই খাই করে ওঠে। তা রাত ৯টা  নাগাদ চারপাশে তেমন কোনো খাবার না দেখতে পেয়ে ভগ্নচিত্তে বাড়ি আসছিলাম,হঠাতই চোখে পড়ল রাস্তার ধারে- তেলেভাজার কাঁচের বাক্স নিয়ে যেন দেবদূতের মর্ত্যে আগমন।উত্ফুল্ল ভাবে গিয়ে বললাম -'কি কি আছে কাকা ?' শেষবেলায় এহেন ভাইপোর আগমনে কাকাও উচ্ছসিত ভাবে তার বাক্সের অবশিষ্ট আলুর চপ ও মোচার চপ দুটি আমার হাতে  সমর্পন করে খুব সম্ভবত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রাস্তায় খেতে খেতে হাঁটতে ভারী চমত্কার লাগে আমার,চারপাশে লোক কেমন যেন অস্বস্তির ভঙ্গিতে লক্ষ্য করে খাদককে। সেই দৃষ্টিসমূহ পর্যবেক্ষণ করতে করতে যখন আমি গৃহের  অত্যন্ত নিকটবর্তী,অনুভব করলাম আমার হাতে চপের একটা শেষ টুকরো অপেক্ষারত। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না কোনটা আগে খেলাম ? আলু না মোচা ? জিভ,নাকের স্মৃতি ঘেঁটে ,দাঁতের ফাঁকে জিভ দ্বারা অনুসন্ধান চালিয়েও তার কিছুমাত্র কিনারা করা গেল না।কি খেলাম,পেটে কি গেল না জানতে পারলে আমার ভারী অস্বস্তি হতে থাকে,কিন্তু স্মৃতির বিশ্বাসঘাতকতার দরুন  নিদারুন অস্বস্তি নিয়েই শেষ চপের টুকরোটা মুখে ঢোকালাম। আরে !!চপের মধ্যে শক্ত এটা কি ??দাঁত পড়তেই বুঝলাম আদি ও অকৃত্রিম নারকোলের টুকরো। ব্যাস পূর্ববর্তী সমস্ত ভাবনার ইতি ঘটে গেল চপের মধ্যে নারকোলের আবিষ্কারে,আহা !এই আবিষ্কার আর্কিমিডিসের চেয়ে কম কিসে ? আলুর চপে তো আর নারকোলের টুকরো থাকে না ,তাই শেষ চপটা যে মোচার ,তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ আর থাকে কি ?


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

আমার সান্দাকফু আরোহন বৃত্তান্ত

KOLKATA FOOD LEGENDS : PART 1

বিহার ফুড ডায়েরি