EKTI SONGBORDHONA
অধুনা ভারতবর্ষে 'ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ ' নামক যে ব্যাট বলের খেলাটি পাখনা মেলিয়াছিল ,তা সম্প্রতি সাত সাতটি বর্ষ বেশ হেসেখেলে অতিক্রম করে ফেললো।যে সব ক্রিকেট বোধ্ধারা প্রথম বছরে 'ক্রিকেট খেলাটি রসাতলে গেল' বলে প্রচুর হট্টগোল করছিলেন তাদের অনেকেই আজ চ্যানেলে চ্যানেলে খেলার বিশ্লেষনে রত। ইতিমধ্যে কলকাতার টিম 'কলকাতা নাইট রাইডার্স' (যদিও নামে হলেও সে দলে কলকাতার বিশেষ কেউ খেলে না )শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে হারিয়ে ) এই বছর দ্বিতীয়বার জিতে নিল এই খেতাব।আর সাথে সাথেই আহ্লাদে ডগমগ হয়ে ২০১২ সালের মতোই মমতাদিদি তার খেলোয়াড় (ও অভিনেতা এবং শিল্পপতি ) ভাইদের জন্য সংবর্ধনার ব্যবস্থা করে ফেললেন ইডেন গার্ডেনে। তা কথায় বলে ,বাঙালি হুজুগে জাতি -সে কথা যে নিতান্ত অমূলক নয় তা আজকের 'সঙ'বর্ধনা সভায় আরো একবার প্রমানিত হয়ে গেল। ফ্রি পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল থানা থেকে।যে জিনিস দেখার পাস নিতে থানার মতো বিপজ্জনক জায়গায় ঢুকতে হয় ,সে অনুষ্ঠান যে কতদূর বিঘ্নহীন হবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকতে বাধ্য। বাস্তবিকই তাই ঘটলো। 'পাস হস্তে' ও 'মুক্তহস্তে ' শয়ে শয়ে ভক্তকূল ও 'ক্রীড়াপ্রেমী' পাড়ি দিল ইডেন অভিমুখে এবং খুব শীঘ্রই জনগনের চাপে পুলিশের ব্যারিকেডগুলি দন্ডায়মান অবস্থা থেকে ৯০ ডিগ্রী স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হলো। ব্যাস !!পুলিশের ঘটল ধৈর্য্যচুতি। আমাদের মত রাম-শ্যাম-যদু-মধুর ধৈর্য্যের চ্যুতি ঘটলে তা এমন কিছু বড়ো ব্যাপার নয় ,কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে ব্যাপারস্যাপার আলাদা। শুরু হয়ে গেল দমাদম লাঠিচার্জ,মাউন্টেড পুলিশরা চুটিয়ে দিল ঘোড়া ছুটিয়ে (অনেকদিন পর তাদের কাজ করতে দেখলাম,সেই দ্বাপর যুগে বোধহয় শেষ কাজ করতে দেখেছিলাম )জনতা মুহুর্তে ছত্রভঙ্গ ,'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' বীজমন্ত্র স্মরন করে বিক্ষিপ্ত ছেলে-বুড়ো-মহিলারা ছুটতে লাগলো ইধার-উধার। এই সময় টিভি ক্যামেরায় আশ্চর্য সব দৃশ্য দেখা যেতে লাগলো -এক দাদু লাঠির বাড়ি খেয়ে কাঁদছেন,নাতির হাত ধরে দিদিমা ছুটছেন,কোলে বাচ্চা নিয়ে মহিলা পুলিশী সক্রিয়তার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন(বাচ্চ্চা থাকায় পুলিশ অসহায় ) ইত্যাদি। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম,যষ্টিধারী আইনকর্তার থেকে অশ্বারোহী আইনকর্তারাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। বড়জোর ঘোড়ার ধাক্কা খেতে হয় (তবে এটি একান্তই ব্যক্তিগত মতামত,অনুসরণকারীকে অগ্রপস্চাত বিবেচনার অনুরোধ রইলো।) নিউটনের শক্তির সংরক্ষন সূত্রানুসারে কয়েকজন আহত হতে খুব বেশি সময় লাগলো না ,অন্যদিকে 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া ' সুত্রে এক পুলিশকর্মীর মাথাতেও ইটের আঘাত সময়ের অপেক্ষা ছিল মাত্র। ফলে টিভি ক্যামেরার পোয়াবারো- 'ইডেনে রক্তপাত ' নামক 'ব্রেকিং নিউজ ' ছড়াতে লাগলো চ্যানেলে চ্যানেলে।এক যুবকের মাথা ফেটে গেছে দেখে বাবা বললো -' একে এবার ঢুকিয়ে নেবে। ' বিনামূল্যে সার্কাস দেখার পরিশ্রমটা বড়ই বেশি ঠেকলো।
ওদিকে ভেতরে তখন এসে গেছে আমাদের 'প্রানাধিক' প্রিয় (বাইরের ঘটনা দেখার পর তা বলতেই হয় ) নাইটেরা ,দিদি আর শাহরুখ খান ও অনতিবিলম্বে এসে পড়লেন। তারপর উত্তরীয় ,মিষ্টি,আম,সোনার আংটি তুলে দেওয়া হলো সকলের হাতে ,যদিও মাঝে মাঝে এর আম,সন্দেশ ওর হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছিলো ,কিন্তু আংটির ক্ষেত্রে সবাই খুব সজাগ ছিলেন। শাহরুখ খান তারপর দলবল নিয়ে শুরু করলেন ইডেন 'পরিদর্শন ',গানা ও নাচা হতে থাকলো মাঝে মাঝে। বিকেলের দিকে আপামর কলকাতাবাসীকে কাঁদিয়ে ফিরে গেল নাইটরা। রয়ে গেল ইডেনের বুকে তাদের সংবর্ধনার চিহ্ন,পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ,মমতাদির জনমোহিনী রাজনীতি নিয়ে বিরোধী দলের কটাক্ষ ও অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া ও না পাওয়া কিছু মানুষের সুখের ও আতঙ্কের স্মৃতি। কলকাতা রইলো কলকাতাতেই।
Besh likhechish .. arro chai. eirokom
ReplyDelete