কাপ বিশ্বের ,ফুটবল বাঙালির
হইহই করে চারটে বছর পারি দিয়ে ভারতবর্ষ তথা বাঙালি ফের এক চেনা জ্বরে আক্রান্ত হযে পড়ল।
ফুটবল জ্বর।এ অবশ্য বাংলার ক্রনিক রোগভোগের মধ্যে অন্যতম।১৯১১ তে মোহনবাগান সেই যে গোরাদের হারিয়ে শিল্ড আনলো ঘরে-আর বাঙালির ঘাড়-মুখ গুজে ফুটবল প্রেমে একদম হাবুডুবু অবস্থা।যদিও আজকালকার মোহনবাগান সমর্থক ও বাঙালিরা ক'জন সেই শিল্ডজয়ী বীরদের সন্মন্ধে জানেন তা 'ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় ' এর চমত্কার উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।মনে আছে,লোয়ার সার্কুলার রোড সেমেট্রি'তে যখন রেভারেন্ড সুধীর চ্যাটার্জির(মোহনবাগান অমর একাদশের একমাত্র বুট পরা প্লেয়ার) সমাধিসৌধ খুঁজে  পেয়েছিলাম,তখন ঘাসে আর আগাছায় ঘেরা সেই ফুটবল আঁকা সমাধি দেখে বড্ড খারাপ লেগেছিলো। বাঙালির ফুটবল মাতামাতি অবশ্য এই কয়েক দশক আগে অব্দিও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান এর চৌহদ্দিতেই মাথা ঠুকে,ভিড় করে বড় ম্যাচের টিকেট কেটে,ম্যাচ জেতার পর ছাতা জুতো হারিয়ে,গন্ডগোলের সময় মাউন্টেড পুলিশের লাঠি খেয়ে বেড়াতো।
কিন্তু সহস্রাব্দ বদলের সাথে সাথে 'ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ','লা  লিগা ' শব্দগুলো বাঙালির অভিধানে আস্তে আস্তে জায়গা  নিচ্ছিলো। 'ম্যাঞ্চেস্টার','লিভারপুল ','বার্সেলোনা' ভূগোলের পাতা ছেড়ে নেমে আসছিলো রাতজাগা টিভির পর্দায়।পশ্চিম থেকে ভেসে আসা দ্রুতগতির ফুটবলের এক নতুন স্বাদ গন্ধে বাঙালি খুব তাড়াতাড়ি কলকাতা ময়দান ভুলতে বসলো। এখন তো এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে ক্লাস ২ এর ছেলের 'প্রিয় খেলোয়ার' কে ? জিজ্ঞাসা করলে -'মেসি 'টাই খুব বেশি শোনা যায়,কলেজে গিয়ে যদি একবারও কেউ বলে -'আমি ইন্ডিয়ান ফুটবল দারুন ভালোবাসি ' তবে হোল কলেজ লাইফে নাকি সুরে 'কেন প্রেম দিলে না প্রাণে' গাওয়ার চান্স প্রবল।
তবে আমরা হুজুগ ভালোবাসি ,তাই সেদিক দিয়ে কোনো চান্স ছাড়তে আমরা রাজি নই। ওয়ার্ল্ড কাপ এসে পড়লেই পাড়ার চতুর্দিক আকাশী -সাদা  বা হলুদ-সবুজ পতাকায় মুড়ে ফেলি,অন্য রং যে থাকে না তা নয় ,তবে অন্য দুটোর তুলনায় নেহাতই 'তৃনায় মন্যে ',আমার পরিচিত এক রাজনৈতিক দাদা আমায় একবার বলেছিলেন -'জানিস তো,বাঙালিরা শক্ত ছাতার তলায় থাকতে পছন্দ করে,তাই দেখবি কলকাতার মাঠে ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান ,ভোটে লাল আর সবুজ ,এর মধ্যেই থাকে -আনকমন রাস্তায় হাঁটা আমাদের ধাতে সয় না '.পাড়ার ক্লাবে,বাড়িতে রাত জেগে হামলে পড়ে রবেন,কোস্তা ,পারসী,ইনিয়েস্তা এদের পায়ের জাদুতে আমরা উত্তেজিত,শিহরিত,কম্পিত হতে থাকি ক্ষণে ক্ষণে;আর পরের  দিন বাজারে গরম আলোচনার মাঝে ডুবে গিয়ে ঝিঙ্গের বদলে পটল নিয়ে আসি। 'ভারত কি কোনদিন ওয়ার্ল্ড কাপ খেলবে না?' কোনো এক আহাম্মক এই প্রশ্ন তুলবেই তুলবে,আর মুহুর্তে হাজার একটা ব্যঙ্গ -উপদেশ -আক্ষেপ তার কথার পিঠে এসে পড়বে ICBM এর মত।
এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা,আমার এক বন্ধু ভারী ফুটবল ভক্ত ,বিশ্বকাপ এলেই তার খাওয়া  ঘুম ছুটে যাবার যোগার হয়।বাড়িতে সে তখন রোজ ৪তে করে পেপার নেয় ,কারন ছবি,পেপার কাটিং সব তার বিশেষ বিশ্বকাপ খাতায় জমা হতে থাকে।আমি তাকে একবার বলেছিলাম এসবের পিছনে এত না খেটে ফুটবল শেখার জন্য ,সে উত্সাহিত হযে একটা কোচিং ক্যাম্পে যোগ দেয় কিন্তু  মাসখানেক পর 'ধুর,বড্ড খাটায় ' বলে ছেড়ে দিতেও কসুর করেনি। এখন সে অবশ্য আর পেপার কাটেনা,গুগল থেকে ডাউনলোড করে ফেসবুকে আপলোড করে দেয়।বঙ্কিমের 'আনন্দমঠের' কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে বলা যায় -'বাঙালির ছেলে,দুনিয়ার তাবর তাবর প্লেয়ার এর ভুল ধরতে মজবুত,কিন্তু কাজের বেলা  . . . '
তবু ওয়ার্ল্ড কাপ যখন এসেই পড়েছে তখন তাকে অস্বীকার আর করি কি করে? ব্রাজিলে উপযুক্ত শিক্ষা -স্বাস্থ্যের দাবিতে অনেকে এই ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দিয়েছে বটে ,তবে তাতে আমাদের কিছু এসে যায় বলে মনে হয় না। ক্লাবে ক্লাবে প্রস্তুতি সারা,পতাকা উঠে পড়েছে এই বাড়ি থেকে ওই বাড়ির মাথায়,পেপারে-টিভিতে-দোকানে চালু হযে গেছে হরেক বিশ্বকাপ অফার(এমনকি রান্নাঘরের চিমনি কিনলেও ফুটবল ফ্রি পাওয়া যাছে)।সাম্বার কার্নিভালের তালে দুলছে বাঙালি তথা ভারতবর্ষ। 'ভারত নেই ' তো কি হযেছে ? ধর্মে ও জিরাফে আমরা তো আছি। চিরকাল আমরা তো বিশ্বাস রেখেছি এই বাক্যগুলির প্রতি -"At the beginning of every revolution,men hope,for they think of all that mankind may gain in a new world; Ιn its next phase,they fear,for they think of what mankind may lose."

Comments

  1. u wrote,DONT BELIEVE THAT A COMMON LIFE DOES NOT HAVE ANY UNCOMMON FEELINGS TO SHARE..u also wrote,i am what others r not......
    thik millo na bodh hoy

    ReplyDelete
    Replies
    1. i am common in terms of so-called society..but within me there is another one who is not like others.

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিহার ফুড ডায়েরি

KOLKATA FOOD LEGENDS : PART 1

আমার সান্দাকফু আরোহন বৃত্তান্ত